সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

জামালগঞ্জ উপজেলা: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা একটি ঐতিহাসিক এবং কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এর নামকরণ, প্রতিষ্ঠা, ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, অর্থনীতি এবং শিক্ষাব্যবস্থা এটিকে স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছে।
নামকরণ
জামালগঞ্জ নামের উৎপত্তি নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। ভাটীপাড়ার জমিদার মরহুম এখলাছুর রহমান চৌধুরীর তথ্যমতে, তাঁদের বংশের পূর্বপুরুষ জামাল ফারুকী নামে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ভাটীপাড়া এস্টেট তাদের নব-অর্জিত দুটি তালুকের নাম রাখেন জামালগড় ও জামালপুর। পরবর্তীতে সাচনা বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নদীর পশ্চিম পাড়ে একটি নতুন বাজার স্থাপিত হলে তার নামকরণ করা হয় জামালগঞ্জ। “জামাল” একটি আরবি শব্দ যার অর্থ মনোরম বা সুন্দর, এবং “গঞ্জ” শব্দের অর্থ বাজার বা শহর। এই বিচারে, জামালগঞ্জ অর্থ “সুন্দর বা মনোরম শহর”।
প্রতিষ্ঠা ও সীমানা
জামালগঞ্জ ১৯৪০ সালের ১২ এপ্রিল একটি ‘জলথানা’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন এটি সুরমা নদীর বুকে ভাসমান বোটে পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১৮ এপ্রিল জামালগঞ্জ থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। এর স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন মনসুর আফজাল টি. কিউ. এ।
বর্তমানে জামালগঞ্জ, সাচনা বাজার, বেহেলী, ভীমখালী ও ফেঁনারবাক – এই পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা গঠিত। এর বর্তমান আয়তন প্রায় ৩৩৮.৭৪ বর্গ কিলোমিটার।
ভূগোলিকভাবে, জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তরে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা, দক্ষিণে খালিয়াজুরী ও দিরাই উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা অবস্থিত। এটি মেঘালয় রাজ্যের পর্বত শ্রেণীর কাছাকাছি অবস্থিত, যা এটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অনেক হাওড় ও বাওড় দিয়েছে।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী
* কৃষক সম্মেলন: ১৯৩৭ সালে এ উপজেলার বেহেলী গ্রামে করুণাসিন্ধু রায়ের নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
* মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামালগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। ২৯ জুলাই সাচনা বাজারে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে সিরাজুল ইসলাম শহীদ হন। ১২ আগস্ট তেলিয়া গ্রামে পাকসেনারা ৮ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করে। অবশেষে, ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জামালগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত হয়।
অর্থনীতি ও বৈশিষ্ট্য
জামালগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক। এখানে প্রচুর হাওড় ও নদী থাকায় অনেক মানুষ উন্মুক্ত হাওড় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, বিশেষ করে বর্ষাকালে। এছাড়াও নদী, খাল ও বিল থেকে সরকারি রাজস্বও আসে। ধান, গম, আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, এবং শাকসবজি এখানকার প্রধান ফসল। মাছ এখানকার অন্যতম প্রধান সম্পদ। বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল টাঙ্গুয়ার হাওর এই অঞ্চলের কাছেই অবস্থিত এবং মৎস্য ব্যবসার জন্য এটি বিখ্যাত। ১৯৬০ সাল থেকে এই অঞ্চল পাথর ও বালির ব্যবসার জন্য পরিচিত।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি
উপজেলার শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও এখানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
* জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫)
* জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮)
* ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮)
* আলাউদ্দিন মোমোরিয়েল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭)
* নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯)
* জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮২)
এই তথ্যগুলো জামালগঞ্জ উপজেলার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যের একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়।